পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ৩ মে, ২০১২

বাংলাদেশে শ্রমিক আন্দোলনের গতিমুখ


বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলন আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। শ্রমিক বলতে প্রধানতঃ গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিক। পাকিস্তান আমল থেকে এই দেশে যে ট্র্যাডিশনাল শিল্প ছিল, যেমন পাটকল, বস্ত্রকল ও চিনিকল তা প্রায় বিলুপ্ত হবার পথে। আদমজীসহ বড় বড় জুট এখন একেবারে বিলুপ্ত অথবা বন্ধ রয়েছে। টঙ্গী অথবা শীতলক্ষা পারে যে সুতা ও কাপড়ের কারখানা ছিল, সেগুলি এখন জনশূন, নিষ্প্রাণ। বিশ্বায়নের প্রভাবে এক ধরনের বিশিল্পায়ন ঘটেছে নব্বই এর দশক থেকে। তবে শ্রমিক সংখ্যা হ্রাস পায়নি। বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি-শ্রমিক বাদ দিলেও প্রাতিষ্ঠানিক ও ইনফরমাল প্রতিষ্ঠানের মোট শ্রমিকের সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও তা যে এক কোটির উপরে হবে এটা বলা চলে।
বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে এক ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তনও সাধিত হয়েছে গত দেড়-দুই দশকে। বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে পড়লেও, ছোট ও মাঝারী শিল্প তৈরী হয়েছে অনেক। এই সকল শিল্পের মালিকরাও নতুন, শ্রমিকও নতুন প্রজন্মের। তার মধ্যে নারী শ্রমিকের প্রাধান্য বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। সবচেয়ে বড় শিল্পখাত হলো গার্মেন্টস শিল্প। প্রধানতঃ ঢাকা ও চট্টগ্রাম দুইটি বড় শহরে ও তার আশেপাশে রেডিমেড গার্মেন্টসের কারখানাগুলো অবস্থিত রয়েছে। গার্মেন্টস শিল্পে নিয়োজিত আছে প্রায় তিরিশ লক্ষ শ্রমিক, যার ৮০ শতাংশ নারী, যাদের গড় বয়স ১৭ বৎসর মাত্র। আগের জুট মিল বা টেকসটাইল মিলকে ঘিরে থাকতো শ্রমিক কলোনী। ঢাকার আদমজী, ডেমরা, শীতলক্ষার পার অথবা টঙ্গীতে ছিল শ্রমিক কনোলী। হাজার হাজার শ্রমিক একসঙ্গে বাস করতো, যা ছিল শ্রমিক আন্দোলনের জন্য বড় শক্তি। এখন আর সে রকম শ্রমিক কলোনী নাই। তবে ঢাকার আশেপাশে কয়েকটি অঞ্চলে গড়ে উঠেছে গার্মেন্টস পল্লী বা শ্রমিক-বস্তি, যেখানে নানা কারখানার শ্রমিক একত্রে গাদাগাদি করে বাস করে।
এই শ্রমিকদের পাঁচ শতাংশও সংগঠিত নয়। অন্যদিকে, মালিকরাও আধুনিক বুর্জোয়া হয়ে উঠতে পারেনি। তাদের মধ্যে সামন্ত মানসিকতা কাজ করে। তারা কোনভাবেই ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন মেনে নিতে রাজী নয়। তারা প্রধানতঃ আদিম কায়দায় শোষণ করতে অভ্যস্ত ও স্বভাবগতভাবে লুটেরা চরিত্রের। ফলে গার্মেন্টস শিল্পে শোষণের হারও বেশী, কারখানার পরিবেশও অমানবিক ও অস্বাস্থ্যকর। ফলে স্বাভাবিক ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন বিকশিত না হয়ে বার বার স্বতঃস্ফর্ত অভূত্থান ঘটছে। সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিক অঙ্গন যে আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, তা কোন অস্বাভাবিক ও নতুন ঘটনা নয়।
গার্মেন্টস শিল্পে নূন্যতম মাসিক পাঁচ হাজার টাকা মজুরীর দাবী উঠেছে। এ ব্যাপারে শ্রমিকদের মধ্যে সাধারণ ঐক্যমত্য লক্ষ্য করা গেছে। জাতীয় পর্যায়ে যে সকল শ্রমিক সংগঠন আছে, তারা সকলেই এই দাবীর প্রশ্নেও একমত হয়েছেন। আজকের বাজার দর হিসেব করলে এই দাবী খুবই ন্যায়সঙ্গত। আইএলও কনভেশনে উেল্লখ আছে, একজন শ্রমিকের নূন্যতম কতটা পুষ্টি দরকার। এমনকি সাবান ইত্যাদিও কতটা দরকার। তাও উেল্লখিত আছে। সেই সব হিসেব করলে শ্রমিকের মজুরী আরও বেশী হওয়া উচিত। এখানে আরও উেল্রখ্য যে, ট্রাডিশনাল পাট ও বস্ত্র শিল্পে শ্রমিকদের জন্য থাকার কলোনী, চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি ফ্রিজ বেনিফিটের ব্যবস্থা ছিল যা পাকিস্তান আমলে শ্রমিকরা অনেক সংগ্রাম করে আদায় করেছিল তা আজকের গার্মেন্টস শিল্পে অথবা নতুন গজিয়ে ওঠা কারখানাসমূহে অনুপস্থিত রয়েছে। তাই সব মিলিয়ে, শ্রমিকের ঘর ভাড়া, ওষুধ ও চিকিৎসা খরচ, নূন্যপক্ষে চারজনের এক পরিবারের জন্য মাসিক পাঁচ হাজার টাকা মোটেই বেশি নয়।
মালিকরা পাল্টা হুমকি দিচ্ছে যে, নূন্যতম মজুরী এত বেশী হলে তারা নাকি কারখানা বন্ধ করে দেবে। এটা আসলে ফাকা হুমকি। কারণ হিসেব করে দেখা গেছে যে, পাঁচ হাজার টাকা নূন্যতম মঞ্জুরী এবং সেই অনুপাতে অন্যান্য স্কেলের মঞ্জুরী ও পিস রেটের দাম নির্ধারণ করলেও মালিকের মোটা মুনাফা থাকবে। ২০০৬ সালের জুন মাসে এক বিরাট শ্রমিক অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন প্রথমবারের মতো সরকারের টনক নড়েছিল। তারা গার্মেন্টস শিল্পে নূন্যতম মঞ্জুরী নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি নিয়োগ করেছিল যেখানে সকলেই ছিল মালিকের প্রতিনিধি অথবা মালিক পক্ষের প্রতি সহানুভূতিশীল। নাজমা নামে একজন শ্রমিক নেত্রী ছিলেন, কিন্তু তিনি সরকার কর্তৃক মনোনীত ছিলেন। সেই কমিটি নূন্যতম মঞ্জুরী নির্ধারণ করেছিল মাসিক মাত্র ১৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা। সেদিন কোন শ্রমিক সংগঠন এটা মানেনি। তথন দাবী ছিল তিন হাজার টাকার নূন্যতম মঞ্জুরীর। পাঁচ বৎসর পর মুদ্রাস্ফীতি হিসেব করলে এখন পাঁচ হাজার টাকা খুবই যুক্তিসক্ষত।

এরপর আসা যাক শ্রম দিবস প্রসঙ্গে। বাংলাদেশে শ্রম আইনে এ সম্পর্কে সুসঙ্গত বিধান আছে। তা হলো (১) সপ্তাহে ছয়দিন শ্রমিকরা কাজ করবেন, প্রতিদিন আট ঘন্টার বেশী নয় (২) দুই ঘন্টা ওভার টাইম কাজ করানো যেতে পারে, কিন্তু কোনক্রমেই তার বেশী নয়। অর্থাৎ কোন অবস্থাতেই ১০ ঘন্টার অতিরিক্ত হতে পারবে না। (৩) এই অতিরিক্ত দুই ঘন্টার জন্য শ্রমিককে দ্বিগুন মজুরী দিতে হবে। (৪) কোন অবস্থাতেই মিল কর্তৃপক্ষ জোর করে অর্থাৎ শ্রমিকের সম্মতি বতিরেকে ওভারটাইম কাজ করাতে পারবে না।
এটা জোরের সঙ্গে বলা যায় যে, ব্যতিক্রমহীনভাবে কোন গার্মেন্টস কারখানায়, এই আইন মানা হয় না। শ্রমিককে জোর করে ১৬/১৮ ঘন্টা এমনকি তার চেয়ে বেশী পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হয়। আর দ্বিগুন মজুরীও দেয়া হয় না। বস্তুত: কারখানায় এক ধরণের শ্রম দাসত্ব চলছে। এছাড়াও কারখানার পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। ব্যবস্থাপনাও অমানবিক। অধিকাংশ কারখানায় মহিলা শ্রমিকদের পর্যন্ত বাথরুমে যাবার জন্য পাঁচ মিনিট ছুটি দিতেও চায় না কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া দৈহিক নির্যাতন, গালিগালাজ ও এমনকি যৌন নিপাড়নের ঘটনাও আছে। বস্তুত: নব্য ধনীক যারা কারখানার মালিক হয়েছে, তাদের সাংস্কৃতিক মানও সাধারণভাবে বেশ নিচু।
গার্মেন্টস কারখানায় আগুন লাগার ঘটনাও অনেক। গত এক দশকে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক আগুনের কারণে মারা গেছেন। কারখানায় বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লাগে। এটি দুর্ঘটনা। অবশ্য এক্ষেত্রও মালিকের অসাবধনতাও দায়ী। কিন্তু তার চেয়ে বড় অপরাধ তারা যেটা করে তা হলো, তারা বের হবার প্রধান গেট বন্ধ রাখে। তার উপর অপ্রসস্থ সিড়ি ও করিডোর হওয়ার ফলে পায়ের তলায় পিষ্ট হয়েও মারা গেছেন অনেক শ্রমিক। এই সকল অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। তাছাড়া শ্রম আইন লঙ্ঘন  করার জন্য যে শাস্তির বিধান আছে, সেই শাস্তি এখনও পর্যন্ত কোন মালিক পায়নি। দুই একটি মালিক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেলে তারা হয়তো কিছুটা সচেতন হতো।
আগেই বলেছি এই মালিকরা নব্যধনীক এবং মূলতঃ লুটেরা চরিত্রের (তাই তারা কিছুতেই ট্রেড ইউনিয়ন মেনে নিতে রাজী নয়) ফলে গার্মেন্টস কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করা খুবই কঠিন। শ্রকিকরা ট্রেড ইউনিয়ন করার উদ্যোগ নিলে উদ্যোক্তাদের ছাটাই করবে।মিথ্যা মামলা দেবে এবং রাস্তায় ভাড়াটিয়া গুন্ডাদের দিয়ে আক্রমন করবে। সম্প্রতি সরকার শ্রম আইন সংশোধন করে ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনের জন্য যে বিধান করেছে তাতে আরও কঠিন হয়েছে ট্রেড ইউনিয়ন করা। এখনকার বিধান অনুযায়ী ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন পেতে হলে সরকারের শ্রম দফতর প্রথমে ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকর্তা ও সদস্যদের নাম মালিকের কাছে পাঠাবে এবং মালিকের সম্মতি নিতে হবে। অর্থাৎ ট্রেড ইউনিয়নকে মালিকের অধীনস্থ করার প্রয়াস। এতেই প্রমাণিত হয় সরকার কার স্বার্থে কাজ করছে। বস্তুত: এ যাবৎকালের সকল সরকার এবং প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলি যে ধনীক শ্রেণীর প্রতিনিধি ও শ্রমিক বিদ্বেষী তার ভূরি ভূরি প্রমাণ আছে।
কিন্তু শোষণ নিপীড়ন যেখানে আছে সেখানে প্রতিরোধ গড়ে উঠবেই। এটা প্রকৃতির নিয়ম। তাই শ্রমিক আন্দোলন স্বাভাবিক ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের পথ না পেয়ে রাজপথ অবরোধ ও অভ্যূত্থানের পথ বেছে নিচ্ছে। মালিক ও সরকার বলার চেষ্টা করে যে এখানে নাকি কোন তৃতীয় পক্ষের উস্কানীতে ভাঙ্গচোর ইত্যাদি হচ্ছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীও এমন অভিযোগ করেছেন। বিদেশী এজেন্টের কারসাজি–এই অভিযোগে তদানিন্তন কেয়ারটেকার সরকারের আমলে একজনকে গ্রেপ্তারও করেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের হস্তক্ষেপের কারণে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল।
কয়েকমাস আগে হামিমগ্রুপের একটি কারখানায় আগুন লাগিয়েছিল কতিপয় দুস্ষ্কৃতিকারী । জানা গেছে তারা জুট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং তা নিয়ে কারখানার মালিকের সঙ্গে বিরোধ ছিল। অগ্নি সংযোগের ব্যাপারে কোন শ্রমিক না, বরং ঝুট ব্যবসায়ী জড়িত ছিল। যিনি সরকার দলের স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি।
মোট কথা শ্রমিক  অসন্তোষের  সুযোগ যে কেউ নিতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে বড় সাবোটাজ করছে মালিকরা নিজেরাই। অন্যদিকে, শ্রমিকরা স্বতঃস্ফুর্ত জাগরণের মধ্য দিয়ে যে ধরণের ঐক্য ও সংহতির পরিচয় দিয়েছে তাতে প্রলেতারীয় বৈপ্লবিক  চরিত্রের প্রকাশ ঘটেছে। বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা যেভাবে দলবদ্ধভাবে বাস করতে শিখেছেন। বদমায়েসদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে শিখেছেন এবং সর্বোপরি মালিকের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে ও সংগ্রাম করতে অভ্যস্থ হয়েছেন, তাতে তারা যে প্রগতি ও নারী মুক্তির পথ দেখাবেন, সে আস্থা আমাদের তৈরী হচ্ছে। শ্রমিক আন্দোলনে নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে বলেই আমার বিশ্বাস রয়েছে।

সোমবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১২

মে দিবস ও বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণী

মে দিবস হলো শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক সংহতির ও শ্রেণীসংগ্রামের প্রতীকী দিবস। এর উৎপত্তি ঊনবিংশ শতাব্দীর আমেরকার এক রক্তক্ষয়ী শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সেই সময় ইউরোপ ও আমেরিকায় শ্রমিকদের খাটানো হতো ১৮-১৯ ঘণ্টা বা কখনো কখনো এর চেয়েও বেশি। ঠিক যেমন এখন শ্রমিকদের খাটানো হয় বাংলাদেশের গার্মেন্ট-শিল্পে। পুঁজিবাদের জন্মস্থান ইউরোপ ও আমেরিকায় এভাবে বর্বর উপায়ে নির্মমভাবে শ্রমিক শোষণ করে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটেছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্রথমে ১০ ঘণ্টা ও পরে আট ঘণ্টা শ্রম দিবসের দাবিতে শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রামে নামেন। সেই সময় 'সুসভ্য' আমেরিকায় শ্রমিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র, সরকার প্রশাসন, পুলিশ, মিলিটারি, বিচারব্যবস্থা এবং প্রচার মিডিয়া একজোট হয়ে নেমেছিল। এমনকি শ্রমিকদের মধ্যে গুপ্তচরবৃত্তি করা, ধর্মঘট ভাঙা ও খুন করার জন্য বৈধভাবে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন সংস্থা (যথা_পিংকার্টন এজেন্সি), যাদের মালিকরা শ্রমিক দমন, খুন ইত্যাদির জন্য ভাড়া করতেন। এসব খুনে বাহিনীর কদর ও আয় এতটাই বেশি ছিল যে পিংকার্টনের মতো এজেন্সি নিজেরাই বৃহৎ বুর্জোয়ায় পরিণত হয়েছিল।১৮৬৬ সালের ২০ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৬০টি ট্রেড ইউনিয়ন বাল্টিমোরে একত্রিত হয়ে গঠন করেছিল ন্যাশনাল লেবার ইউনিয়ন। তখন তারা আট ঘণ্টা শ্রম দিবস আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল। আন্দোলন কিছুটা তীব্রতর হলে মালিক ও সরকার মিলিতভাবে চরম দমননীতি চালিয়েছিল। ১৮৭৫ সালেই আমেরিকার বুর্জোয়া আদালত ১০ জন শ্রমিককে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন। ১৮৮৪ সালের ৭ অক্টোবর 'Organiged Trades and Labour Union of the United States and Canada' (পরে ১৮৮৬ সালে যার নাম হয় American Federation of Labour) ঘোষণা করে যে ১৮৮৬ সালের ১ মে থেকে সারা দেশের শ্রমিকরা আট ঘণ্টা শ্রম দিবসের দাবিতে সংগঠিতভাবে সংগ্রামে নামবে। শুরু হলো সারা দেশে প্রস্তুতি পর্ব। এক বছরের মধ্যে সংগঠিত শ্রমিকের সংখ্যা এক লাখ থেকে সাত লাখে উন্নীত হয়েছিল। ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকাজুড়ে দেখা দিয়েছিল ধর্মঘটের তরঙ্গ। আন্দোলনের মূল কেন্দ্র ছিল শিকাগো শহর, যেখানে পাঁচ লক্ষাধিক শ্রমিক ধর্মঘটে অংশ নিয়েছিল। পুঁজিপতি ও সরকার ভীত হলো। তারা আরো হিংস্র হয়ে আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দিল। ৩ মে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিল সাত শ্রমিক। ৪ মে পুলিশ জনতার সংঘর্ষে সাতজন পুলিশ ও চারজন শ্রমিক প্রাণ হারায়। এরপর চলল খুন আর বীভৎস রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। পরে চারজন বীর শ্রমিক নেতাকে ফাঁসি দিয়েছিল আমেরিকার বুর্জোয়া বিচারালয়। সেই সময় আমেরিকার প্রায় সব কয়টি পত্রিকা লিখেছিল, 'প্রতিটি ল্যাম্পপোস্ট কমিউনিস্টের ধর্মঘটী শ্রমিককেই তারা কমিউনিস্ট বলে আখ্যায়িত করেছিল। এর আগেই মার্কস-অ্যাঞ্জেলস লিখেছিলেন, 'ইউরোপকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে কমিউনিজমের ভূতের ভয়।' সেই ভূতের ভয় আমেরিকা পর্যন্ত পেঁৗছে।১৮৮৮ সালের ডিসেম্বরে সেন্ট লুইতে আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবারের অধিবেশনে সিদ্ধান্ত হয়, ১৯৯০ সালের ১ মে থেকে প্রতিবছর শ্রমিক আন্দোলনের এই রক্তক্ষয়ী মহান দিবসটি পালন করা হবে সারা আমেরিকায়। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রতিষ্ঠা কংগ্রেসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্যারিসে মার্কসের সহযোদ্ধা ফ্রেডারিখ অ্যাঞ্জেলসের নেতৃত্বে। তখন মার্কস বেঁচে ছিলেন না। সেই কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে সারা দুনিয়ায় ১৮৯০ সাল থেকে প্রতিবছরই ১ মে তারিখটি শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস হিসেবে পালিত হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৮৯০ সালের ১ মে ইউরোপ ও আমেরিকার প্রায় সব পুঁজিবাদী দেশে শ্রমিকরা ধর্মঘট, সমাবেশ ও মিছিলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংহতি প্রকাশ করে। আট ঘণ্টা শ্রম দিবসসহ অন্যান্য দাবি উচ্চারণ করে। এমনকি অধিক সচেতন শ্রমিকরা পুঁজিবাদের ধ্বংস সাধন ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ও ঘোষণা করেছিল।১৮৯০ সালের ১ মে। ঠিক সেই দিনই অ্যাঞ্জেলস লিখেছিলেন কমিউনিস্ট ইশতেহারের জার্মান সংস্করণের ভূমিকা। তিনি লিখলেন, 'আজকের দিনের দৃশ্য সব দেশের পুঁজিপতিদের ও জমিদারদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে যে আজ সব দেশের শ্রমিকরা সত্যিই এক হয়েছে। নিজের চোখে তা দেখবার জন্য মার্কস যদি এখনো পাশে থাকতেন।'শ্রমিক আন্দোলন এর পরও অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আট ঘণ্টা শ্রম দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। শ্রমিক শ্রেণী অনেক বীরত্বপূর্ণ ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আরো দাবি আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। কোনো কোনো দেশে পুঁজিবাদকে ধ্বংস করে প্রতিষ্ঠা করেছিল স্বীয় শ্রেণীর রাজত্ব, যাকে বলে সমাজতন্ত্র।দুই.মধ্যযুগের পণ্ডিত ম্যাকিয়াভ্যালি তাঁর প্রিন্স গ্রন্থে বলেছিলেন, শাসন করতে হয় দুই উপায়ে কোয়ারসন ও কনসেশন। কোয়ারসন অর্থাৎ জবরদস্তিমূলক শাসন এবং কিছু সুবিধা দিয়ে আপসে শাসন, যাকে বলে কনসেশন। বুর্জোয়ারা তাদের শ্রেণী শাসন অব্যাহত রাখার জন্য প্রথমদিকে জবরদস্তির শাসন পুরোদমে চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল। একপর্যায়ে তারা কিছু কনসেশন দিয়ে শ্রেণীবিরোধকে কিছুটা আড়াল করার চেষ্টা চালায়। বিশেষ করে বিংশ শতাব্দীতে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অভ্যুদয়ের পর তারা বাধ্য হয় কিছুটা কনসেশনের পথ বেছে নিতে। এ পর্যায়েই মে দিবস ও আট ঘণ্টা শ্রম দিবস আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছিল। কিন্তু লক্ষণীয়, যে আমেরিকার ঘটনা থেকে মে দিবসের উৎপত্তি, সে আমেরিকায় মে দিবস আজও সরকারিভাবে স্বীকৃত নয়। অন্যদিকে আমাদের মতো দেশে মে দিবস সরকারিভাবে স্বীকৃত হলেও এ দিবসের ব্যাখ্যা দেওয়া হয় সম্পূর্ণ ভিন্ন। আরো অনেক ক্ষেত্রের মতো এখানেও চলছে ইতিহাসের বিকৃতি।মে দিবসে আমাদের দেশে ছুটি দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেন। মালিক সমিতিও বিবৃতি দেয়। এসব ভাষণ ও বিবৃতির মূল কথা হলো শ্রেণী সমঝোতা। তাঁরা উপদেশ দেন যে শ্রমিকরা উৎপাদন বৃদ্ধি করে ইত্যাদি। অর্থাৎ মালিকের বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে, পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে শ্রমিকের শ্রেণীসংগ্রামের দিকটি ভুলিয়ে দেওয়ার এটাই হলো এক ধরনের অপকৌশল। একদিকে মে দিবসে ছুটি আছে, অন্যদিকে যে আট ঘণ্টা শ্রম দিবসের দাবিকে কেন্দ্র করে মহান মে দিবসের উৎপত্তি, সেই আট ঘণ্টা শ্রম দিবস এখনো কলকারখানায় অস্বীকৃত। হ্যাঁ, আমাদের দেশের শ্রম আইনে বলা আছে আট ঘণ্টা শ্রম দিবসের কথা। কিন্তু গার্মেন্ট-শিল্পে ব্যতিক্রমহীনভাবে কোনো কারখানায় এটা মানা হয় না। এর পরও মে দিবস উপলক্ষে সরকার ও পুঁজিপতিদের পক্ষ থেকে বড় বড় কথা প্রতারণা ছাড়া আর কী হতে পারে?তিন.সম্প্রতি বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণী গঠনের ক্ষেত্রে এবং শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে কিছু তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন লক্ষণীয়। প্রথমত, নারী শ্রমিকের ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ। বিশেষ করে সবচেয়ে বড় শিল্প খাত গার্মেন্ট-শিল্পে ৮০ শতাংশ নারী, যাদের গড় বয়স ১৭। এই নারী শ্রমিকরা যখন দলবদ্ধভাবে কারখানায় কাজ করে অথবা রাস্তায় মিছিল করে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়; তখন তারা সমাজজীবনেও বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসে। নারীমুক্তির ক্ষেত্রেও তারা বড় ধরনের অবদান রাখে, যা উচ্চ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত নারীরাও পারে না। দ্বিতীয়ত, বর্তমান সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, কারখানার কায়িক শ্রমে কিছুটা শিক্ষিত (স্কুল-কলেজে পড়া) মজুরের সংখ্যা আগের তুলনায় বাড়ছে। শ্রেণী-চেতনা বৃদ্ধির জন্য এটা সহায়ক হবে। তৃতীয়ত, দেখা যাচ্ছে, স্বাভাবিক আইনসংগত পথে ট্রেড ইউনিয়ন করা নতুন শিল্পে বিশেষত গার্মেন্ট-শিল্পে অসম্ভব করে তুলেছে মালিক ও সরকার। ইপিজেড অঞ্চলে তো ট্রেড ইউনিয়ন নিষিদ্ধ। কিন্তু শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর যে স্বাভাবিক ধর্ম রয়েছে মানুষের, তা তো আর আইন দিয়ে বন্ধ করা যায় না। তাই শ্রমিক আন্দোলন বারবার অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। যেমনটি নিয়েছিল আমেরিকায় ঊনবিংশ শতাব্দীতে। অনেক অভিজ্ঞতার পর পাশ্চাত্যের পুঁজিপতিরা কিছুটা চতুর হয়ে উঠেছিল, তাই খানিকটা বাধ্য হয়েই তারা আপসের পথে গিয়েছিল। কিন্তু আমাদের দেশের নব্য ধনিক শ্রেণী এখনো পুরো বুর্জোয়া হয়ে ওঠেনি, পরিপক্বও হয়নি। তাই এখানে শ্রমিকদের জীবনমান, কারখানার পরিবেশ ও শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য অনেকটা ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপ-আমেরিকার মতোই রয়ে গেছে।কিন্তু মনে রাখতে হবে, সেই পরিবেশ ও পরিস্থিতি থেকেই জন্ম নিয়েছিল মহান মে দিবস, ঐতিহাসিক প্যারি কমিউন ও অক্টোবর বিপ্লব। বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণীর গতিমুখ যে সেদিকেই, সে রকম ভবিষ্যদ্বাণী খুব সহজেই করা যায়। কারণ এটাই হলো ইতিহাসের অমোঘ বিধান।লেখক : রাজনীতিক ও কলামিস্ট

বুধবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১২

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রাজনীতি: অশনি সংকেত


ronoনির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান আমাদের দেশে ১৯৯৬ সাল থেকে চলে আসছে, তা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে আছে বলে আমার জানা নেই। অনেকে এটাকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভিনব তান্ত্রিক অবদান বলে গর্ববোধ করতেন। আমি ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময় বলে এসেছি যে, সংবিধানের এইরূপ বিধান গণতন্ত্রের জন্য সবলতা নয়, বরং দুর্বলতারই পরিচায়ক।
নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য যেটা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তা হলো অর্থ ও অস্ত্রের দাপট এবং সাম্প্রদায়িক প্রচার বন্ধ করা। এ পর্যন্ত সকল নির্বাচনেই আইন কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণের অতিরিক্ত অর্থের ব্যবহার, টাকা দিয়ে ভোট কেনা ও প্রভাবিত করার কাজটি চলে আসছে।
১৯৯০ সালে সামরিক শাসনের অবসানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমরা একটি বিশেষ ব্যবস্থা হিসাবে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীনে এক ধরনের অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। সামরিক শাসনকালে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা উঠে গিয়েছিল। তাই সেদিন আমরা বামপন্থীরা বলেছিলাম যে, নির্বাচনে আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনে অন্তত: কয়েক টার্ম নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা থাকুক। কিন্তু সেদিন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউই রাজী হয়নি।
১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উত্থাপন করে আওয়ামী লীগ এবং আন্দোলন গড়ে তোলে। তারপর বিএনপি বাধ্য হয় এই দাবি মেনে নিতে। ১৯৯৬ সালে ও ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন–এই নিয়ে যে বিরোধ এবং তা থেকে যে সংঘাতময় পরিস্থিতির উদ্ভব এবং সবশেষে সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বৎসর ধরে অবৈধভাবে শাসন ইত্যাদি ঘটনা আমাদের জানা আছে। তখনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দুর্বলতা ধরা পড়তে থাকে এবং বহুজন বহু বিজ্ঞ ব্যক্তিও বহু ধরনের সংস্কারের পথ নির্দেশ করেন। এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকেই চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যে মামলা হয়েছিল তার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটিই বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান সরকার।
বর্তমান সরকার হাইকোর্টের বরাত দিয়ে এই বিধান বাতিল করার সুযোগ পেলেও তারা কিন্তু হাইকোর্টের পুরো পরামর্শ গ্রহণ করেন নি। বিজ্ঞ হাইকোর্ট সামগ্রিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আরও দুই টার্ম অর্থাৎ পরবর্তী আরও দুটি সাধারণ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। রায়ের এই অংশটি এসেছে পরামর্শরূপে, বাধ্যতামূলক নয়। পরামর্শ সংসদের কাছে। সংবিধানকে সংশোধন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে যে বর্তমান সরকারের তারা এই সুযোগটি গ্রহণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি এখন থেকেই পুরোপুরি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আমার বিবেচনায় কাজটি তারা ভালো করেননি। বিজ্ঞোচিত হয়নি। এর ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা, নির্বাচনের প্রতি অনাস্থা ও নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি এক এগারোর আশঙ্কাও থেকে যায়।
আমরা লক্ষ্ করছি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই ক্ষমতায় থাকলে এক রকম ও ক্ষমতার বাইরে থাকলে আরেক রকম আচরণ করে আসছে। ক্ষমতা থাকলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিপক্ষে এবং বাইরে থাকলে পক্ষে। নির্বাচনে যে দল যখনই পরাজিত হয় তখনই তারা সূক্ষ্ম বা স্থূল কারচুপির অভিযোগ আনে। আর বিরোধী দলের লাগাতার সংসদ বর্জন, এমনকি পদত্যাগ বা পদত্যাগের হুমকি আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছে। বড় রাজনৈতিক দলগুলি সচেতনভাবে এই অশুভ প্রবণতা পরিত্যাগ না করলে তা গণতন্ত্রের জন্য শুভ হবে না। তেমনি এখনই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান উঠিয়ে দেয়া, হাইকোর্টের পরামর্শকে আংশিকভাবে গ্রহণ করা তাদের নিজেদের জন্য এবং সারা দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। বরং অশনি সংকেত শোনা যাচ্ছে।
হায়দার আকবর খান রনো : কমিউনিস্ট নেতা ও প্রাবন্ধিক